আল্লাহর হুকুম, রহমত ও কুদরতে মধু প্রতিটি রোগের ওষুধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সুরা নাহলে বলেছেন : তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।
* রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়: মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে ও বাইরে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।
* হজমে সহায়তা মধুতে যে পরিমাণ শর্করা থাকে তা হজমে সাহায্য করে। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং খুবই কার্যকরী ভাবে কাজ করে থাকে।
*কোষ্ঠকাঠিন্য, মধুতে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ভোরে ১ চা চামচ খাঁটি মধু খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়।
* ফুসফুসের রোগ: ফুসফুসে রোগের জন্য মধু খুবই উপকারী উপাদান।
* শ্বাসকষ্ট নিরাময়: কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো
* গ্যাস্ট্রিক আলসার : গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৩ বেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারেন।
* পাকস্থলীর সুস্থতায়: মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করতে সাহায্য করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে।
* মধু শরীরের ক্ষত, পোড়া চিকিৎসার ব্যবহার করা হয়। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। মধুতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান, যা ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পুঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।
* মধুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান: যা ছত্রাক ও অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে ঠিক করতে সাহায্য করে ও নতুন ত্বক গঠনে ভূমিকা রাখে। চর্মরোগ হলে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে মধু লাগান।
* মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ: যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরের চামড়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে মধু। রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১ চামচ মধুর সঙ্গে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেসপ্যাকের মতো লাগান। রোদে পোড়াজনিত কালো দাগ দূর হয়ে উজ্জ্বল হবে মুখ।
* প্রতিদিন ১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে মধু রক্তস্বল্পতা রোগকে প্রতিরোধ করে।
* মধু ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে সহায়তা করে।
* প্রতিদিন মধু খাওয়া হলে দেহের ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি হয়। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
* মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে হজমশক্তি বাড়ে। ফলে খাবারের ক্যালোরি দ্রুত ক্ষয় হয়।
* যাদের খুসখুসে কাশির সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিন ১ চামচ আদার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান। দ্রুত আরোগ্য হবে। রাসূল (সা.) এর ভাষায়,
* নিদ্রাহীনতায় : মধু মেশানো এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ কালোজিরা মিশিয়ে ঘুমের পূর্বে সেবন করতে হবে। এতে করে অনিদ্রা দূর হয়ে প্রচুর ঘুম হবে।
* মাথা ব্যথায় : পরিমাণ মতো কালোজিরার চূর্ণ এবং তার অর্ধেক পরিমাণ গরম লবঙ্গ এবং অর্ধেক পরিমাণ মৌরিফল এক সাথে মিশিয়ে মাথা ব্যথার সময় ননিযুক্ত দুধের সাথে সেবন করতে হবে। আর কালোজিরার তৈল দ্বারা যন্ত্রণার স্থানে ডলে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
* মধু :
কুরআনের আলোকে-‘আর মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি নির্গত হয়, যা মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ সূরা নাহল : ৬৯।
হাদিসের আলোকে,
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কুরআন হলো যেকোনো আত্মিক রোগের জন্য আর মধু হলো দৈহিক রোগের জন্য। ইবনে মাজাহ।
মধুর ব্যবহার :
মিষ্টিস্বাদের জন্য বিভিন্ন খাবারের সাথে মধুর ব্যবহার রয়েছে। মধুর গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। সকালের নাশতা ও হালকা খাবারে মধু নেওয়া যেতে পারে। মধুতে পর্যাপ্ত ক্যালরি থাকায় মধু খাওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ প্রোটিন দেহের গঠন বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় রোধে যথেষ্ট কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।
মধুর ম্যাগনেশিয়া ও ফসফরাস শরীরের হাড় গঠনে সহায়ক। মধুর ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম হৃৎপিন্ডকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন এসিড পাকস্থলির বিভিন্ন জৈবিকক্রিয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ করে। মধুতে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে, যার নাম ইনহিবিন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও মধুর বহুল ব্যবহার হয়। যেকোনও ওষুধকে বেশি প্রভাবশালী ও কার্যকরী করার জন্য মধুর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগে মধু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন-
* যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মধু :
দৈহিক ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু গরম দুধের সাথে পান করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন কালোজিরা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে বা দৈনিক দুই চামচ আদার রস মধু দিয়ে খেলে প্রচুর পরিমাণে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
* পোড়া *
শরীরে কোথাও পুড়ে গেলে সামান্য মধু, মেহেদী পাতার সঙ্গে বেটে লাগালে এতে পোড়াজনিত জ্বালা ও কষ্ট লাগব হয়।
* কোষ্ঠ কাঠিন্য
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ লেবু ও এক চামচ আদার রস এবং দু’চামচ মধু মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ দূর হয় ও কোষ্ঠ কাঠিন্য প্রশমিত হয়।
* রক্তচাপ *
দু’চামচ মধুতে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে সেবন করলে রক্ত চাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
* কাশি*
আদা, পান, তুলসীর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে দু’তিন বার খেলে কাশি কমে যায়।
* দাঁতের ব্যথা *
হঠাৎ যদি দাঁতে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে মধুতে তুলা ভিজিয়ে ব্যথার স্থানে রাখলে ব্যথা কমে যাবে। রূপচর্চায় মধু ব্যবহার
দীর্ঘকালের মুখের দাগ তুলতে ও লাবণ্য মসৃণতায় মধু মেখে উপকার পাওয়া যায়। পরিশ্রম ও গরমে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়লে ঠান্ডা পানির সাথে লেবুর রস মিশ্রিত মধুর শরবত পান করলে দেহে উদ্যম ও সজীবতা ফিরে আসে। বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতে মধুর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার।
মোদ্দকথা, কালোজিরা ও মধুর উপকারিতার শেষ বা সীমা নেই। কালোজিরা ও মধু আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত।